
পরমহংস যোগানন্দ: একজন মহাযোগীর জীবন ও তার আধ্যাত্মিক দিশা
পরমহংস যোগানন্দ ছিলেন একজন হিন্দু সন্ন্যাসী, যোগী এবং গুরু, যিনি সমগ্র বিশ্বের আধ্যাত্মিক দিশারী হিসেবে পরিচিত। তার জন্ম হয় ৫ জানুয়ারি, ১৮৯৩ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের গোরখপুরে। যদিও ভারতের মাটিতে তার জন্ম, তার আধ্যাত্মিক জীবন ও শিক্ষার পরিধি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। তিনি তার জীবনের শেষের তিনটি দশক কাটিয়েছেন আমেরিকা ও ইউরোপে, যেখানে তিনি ভারতের সনাতন যোগ ও ধ্যানপদ্ধতির প্রচার ও প্রসার করেছেন।
“পশ্চিম বিশ্বে যোগের জনক” নামে অভিহিত, যোগানন্দজি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দুটি আধ্যাত্মিক সংস্থা: যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া (YSS) এবং সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ (SRF)। এই দুটি সংস্থা আজও কোটি মানুষের আধ্যাত্মিক শিক্ষার পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করছে।

তার আত্মজীবনী ‘যোগী-কথামৃত’ (Autobiography of a Yogi) আজ একটি অতি উৎকৃষ্ট আধ্যাত্মিক রচনা হিসেবে স্বীকৃত। এটি বিশ্বের ৫২টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং অসংখ্য মানুষের শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক অস্তিত্বের উন্নতিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।
শৈশব এবং আধ্যাত্মিক দীক্ষা:
পরমহংস যোগানন্দের শৈশবের নাম ছিল মুকুন্দলাল ঘোষ। তার পিতা শ্রী ভগবতী চরণ ঘোষ এবং মাতা শ্রীমতী জ্ঞানপ্রভা দেবী উভয়েই ছিলেন শ্রদ্ধেয় শ্যামাচরণ লাহিড়ী মহাশয়ের শিষ্য। মুকুন্দলাল মাত্র ১১ বছর বয়সে তার মাকে হারান, যা তার আধ্যাত্মিক জীবনে একটি গভীর প্রভাব ফেলে। মা হারানোর এই বেদনা তাকে ঈশ্বরের প্রতি আরও নিবেদিত করে তোলে এবং আধ্যাত্মিক সাধনায় মনোনিবেশ করে।
আধ্যাত্মিক জীবনের শুরু:
১৮৬১ সালে শ্যামাচরণ লাহিড়ী মহাশয় মহাবতার বাবাজি মহারাজের কাছ থেকে ক্রিয়াযোগে দীক্ষাপ্রাপ্ত হন। এই দীক্ষা পরবর্তীতে মুকুন্দলালের আধ্যাত্মিক জীবনের ভিত্তি স্থাপন করে। ১৮৯৪ সালে কুম্ভমেলায় শ্রীযুক্তেশ্বর গিরির সাথে বাবাজি মহারাজের সাক্ষাৎ হয়, এবং তিনি জানালেন যে ক্রিয়াযোগ বিজ্ঞানকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য একজন নির্বাচিত হয়েছে—তিনি ছিলেন মুকুন্দলাল ঘোষ, যিনি পরবর্তীকালে পরিচিত হন পরমহংস যোগানন্দ নামে।
যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি এবং সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ:
১৯১৭ সালে পরমহংস যোগানন্দ প্রতিষ্ঠা করেন যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া। এরপর তিনি আমেরিকা যান এবং ১৯২০ সালে সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ। এই দুটি সংস্থার লক্ষ্য ছিল বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যোগ ও ধ্যানের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক শিক্ষা প্রদান করা।

‘যোগী-কথামৃত’ এবং ক্রিয়াযোগ:
১৯৪৬ সালে প্রকাশিত তার আত্মজীবনী ‘যোগী-কথামৃত’ (Autobiography of a Yogi) আজও আধ্যাত্মিক রচনার মধ্যে একটি অন্যতম সেরা গ্রন্থ হিসেবে পরিচিত। এই গ্রন্থে পরমহংস যোগানন্দ ক্রিয়াযোগের গভীরতা এবং এর প্রচলন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। ক্রিয়াযোগ এক প্রাচীন যোগ পদ্ধতি যা মানুষের মন ও শরীরকে শুদ্ধ করে এবং ঈশ্বরপ্রাপ্তির পথে নিয়ে যায়।

উত্তরাধিকার:
পরমহংস যোগানন্দ ৭ মার্চ, ১৯৫২ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে মহাসমাধি লাভ করেন। তার মৃত্যুর পরেও, তার শিক্ষা এবং দীক্ষা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আজও প্রচলিত রয়েছে। যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি এবং সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ আজও তার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী কোটি মানুষের আধ্যাত্মিক জাগরণ ঘটাচ্ছে।
উক্তি:
পরমহংস যোগানন্দের কিছু বিখ্যাত উক্তি:
- “আপনার হৃদয়ে এমন একটি চৌম্বক রয়েছে যা প্রকৃত বন্ধুদের আকর্ষণ করবে। সেই চৌম্বকটি নিঃস্বার্থতা।”
- “আপনি যদি ভাব না করেন তবে কিছুই অসম্ভব নয়।”
- “মৃত্যুর ভয় হাস্যকর, কারণ যতক্ষণ না আপনি মৃত না হন ততক্ষণ আপনি বেঁচে থাকবেন, এবং আপনি যখন মরে যাবেন তখন আর চিন্তার কিছু নেই!”
“পরমহংস যোগানন্দ: পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য MCQ প্রশ্নাবলী”
আপনার পরীক্ষার প্রস্তুতি সহজ করতে আমাদের “পরমহংস যোগানন্দ: MCQ প্রশ্নাবলী” পড়তে পারেন । এই সংগ্রহটি আপনাকে উন্নত এবং প্রিভিয়াস ইয়ার প্রশ্ন সমাধানে সহায়তা করবে।
সফলতার পথে এক ধাপ এগিয়ে যেতে এখানে ক্লিক করুন এবং MCQ প্রশ্ন গুলো পড়ে নিন ।
– #ParamahansaYogananda
– #AutobiographyOfAYogi
– #KriyaYoga
– #SpiritualGuru
– #YSS
– #SRF
– #YoganandaTeachings
– #SelfRealization
– #IndianSpirituality
– #YogaInTheWest
– #পরমহংসযোগানন্দ
– #যোগী_কথামৃত
– #ক্রিয়াযোগ
– #আধ্যাত্মিকগুরু
– #যোগদাসৎসঙ্গ
– #আত্মজীবনী
– #আত্ম_উপলব্ধি
– #ভারতীয়_আধ্যাত্মিকতা
– #যোগ_ও_ধ্যান